সুনামগঞ্জ , শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ , ১২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবর্তন আসছে ধান-চাল ক্রয়ে কোনও সিন্ডিকেট থাকবে না : খাদ্য উপদেষ্টা মধ্যনগরে পলাতক আসামি গ্রেফতার এক কলস পানির জন্য হাঁটতে হয় এক কিলোমিটার সুনামগঞ্জে বিজিবি’র অভিযানে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় ফুসকা ও জিরা জব্দ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন কেন আক্রান্ত? রাস্তা সংস্কারে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন গ্রেফতার সুনামগঞ্জ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওপর ‘হামলা’র নিন্দা বিএনপির সুবিপ্রবি’র স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরে চাই সুনামগঞ্জ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা দিরাইয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য গ্রেপ্তার দিরাইয়ে বজ্রপাতে কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৩ জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে ঊর্ধ্বতনের অনুমতির সিদ্ধান্ত স্থগিত জগন্নাথপুরে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী এমএ কাহারের গণসংযোগ চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জামিন প্রশ্নে রুল শুনানি পেছাল দেশের সীমান্ত পুরো রক্ষিত আছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ১৮ সীমান্ত নদী ভরাটের পথে এক ব্যক্তি টানা দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিপক্ষে বিএনপি

কাশ্মীর হামলা : আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন?

  • আপলোড সময় : ২৪-০৪-২০২৫ ১১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৪-২০২৫ ১১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন
কাশ্মীর হামলা : আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ কি আসন্ন?
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক :: ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে এক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে গেছে গত মঙ্গলবার। জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামের এই রক্তক্ষয়ী ঘটনায় ২৬ পর্যটক বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ২০১৯ সালের পর এটি কাশ্মীরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এই হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, বিশেষ করে ভারত। আর এই কঠোর পদক্ষেপ দুই দেশকে আবারও যুদ্ধের মুখোমুখি করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। নিহতদের সবাই ছিলেন সাধারণ নাগরিক। কাশ্মীর গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। এই হামলা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার দাবি করেছে। এই হামলা সেই ‘স্বাভাবিক’ পরিস্থিতি ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুতর আঘাত। কাশ্মীরের ইতিহাস অত্যন্ত সংঘাতপূর্ণ। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই পুরো অঞ্চলটির মালিকানা দাবি করে, তবে শাসন করে আংশিকভাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতিক্রিয়া অতীতের ঘটনার পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতির ‘চাপ’ দ্বারাও প্রভাবিত হবে। হামলার পরপরই ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে দিল্লি দ্রুত বেশ কিছু প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি-বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি, গতকাল বৃহ¯পতিবার সকালে দেশটি ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ভারত অতীতের মতোই এবারও এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, কিন্তু কোনো প্রমাণ হাজির করেনি। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই হামলার ‘শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া’ জানানোর অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, কেবল হামলাকারীদের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতের মাটিতে এই ‘নৃশংস কাজের’ মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর তাঁর এই ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ যে পাকিস্তান এটি নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। ভারত ঐতিহাসিকভাবে দেশটিতে সংঘটিত যেকোনো সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এখন আসল প্রশ্ন এটি নয় যে- সামরিক প্রতিক্রিয়া হবে কি না? বরং প্রশ্ন হলো, কখন হবে এবং কতটা পরিমিত হবে এবং এরপর কী হবে। ভারতীয় সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা সম্ভবত একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখতে পাব। এটি অভ্যন্তরীণ ক্রীড়নক এবং পাকিস্তানের শক্তিধরদের কাছে দৃঢ় বার্তা দেবে। ২০১৬ সাল থেকে এবং বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর, প্রতিশোধের মাত্রা সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা বা বিমান হামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে এবারে ভারতের বিজেপি সরকার যখন নিজেদের ইমেজ উদ্ধারে মরিয়া, যখন দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় নানাভাবে তাদের প্রভাবের ঝান্ডা হারিয়ে ফেলছে তখন ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে ‘শায়েস্তা’ করে নিজেদের ‘বীর’ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতেই পারে। শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, এখন সরকারের পক্ষে আগের সেট করা স্ট্যান্ডার্ডের চেয়ে নিচে নেমে কাজ করা কঠিন হবে। পাকিস্তান সম্ভবত আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবে। ঝুঁকি সব সময়ই ভুল হিসাবের, উভয় পক্ষের। এর আগে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরি হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার পর ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ পরিচালনা করে। ভারত বলেছিল, তারা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিদের লঞ্চ প্যাড লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে ভারতের বিজেপি নেতারা সব সময়ই বড়াই করেছেন, এমনকি দেশটিতে এই নিয়ে সিনেমা পর্যন্ত তৈরি হয়েছে। যেখানে ভারতীয় সেনাদের ‘বীর’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আর ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় অন্তত ৪০ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে এক সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’ ক্যা¤েপ বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর এটি ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের প্রথম গভীর হামলা। পাকিস্তানও বিমান হামলা চালিয়ে এর জবাব দেয়, যার ফলে আকাশে লড়াই হয় এবং এক ভারতীয় পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। উভয় পক্ষ শক্তি প্রদর্শন করলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয় সে যাত্রায়। দুই বছর পর, ২০২১ সালে দুই দেশ এলওসি বরাবর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, যা এখনো বহুলাংশে কার্যকর। যদিও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বারবার জঙ্গি হামলা হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সর্বশেষ হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি এবং ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সামরিক প্রতিক্রিয়ার জোরালো সম্ভাবনা’ নির্দেশ করে। যদি দিল্লি পাকিস্তানের কোনো ধরনের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বা কেবল অনুমানও করে - সে ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা আছে। কুগেলম্যান বলেন, ভারতের জন্য এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার প্রধান সুবিধা হবে রাজনৈতিক। কারণ ভারতে জোরালো জন চাপ থাকবে দিল্লির ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আরেকটি সুবিধা হলো, যদি প্রতিশোধ সফলভাবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে, তাহলে তা ভারতের ডিটারেন্ট বা প্রতিরোধ সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে এবং ভারতবিরোধী হুমকি হ্রাস করবে। অসুবিধা হলো, প্রতিশোধ একটি গুরুতর সংকট এবং এমনকি সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অ্যাট আলবানির ক্রিস্টোফার ক্লারি মনে করেন, গোপন অভিযানের সুবিধা হলো দায় অস্বীকার করা যায়। কিন্তু এটি দৃশ্যত ডিটারেন্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ নাও করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, এতে ভারতের সামনে দুটি সম্ভাব্য পথ খোলা থাকে। প্রথমত, ২০২১ সালের এলওসি যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়া। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সীমান্ত পেরিয়ে হামলার অনুমতি দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা এমনকি প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও বিবেচনায় আছে। প্রতিটি পদক্ষেপেই পাল্টা হামলার ঝুঁকি রয়েছে। যেমনটা তখন আকাশপথে সংঘর্ষের ঘটনায় দেখা গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা ক্লারি বলেন, কোনো পথই ঝুঁকিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রও এখন অন্য বিষয়ে ব্যস্ত এবং সংকট ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে ইচ্ছুক বা সক্ষম নাও হতে পারে। ভারত-পাকিস্তান যেকোনো সংকটের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। এই বাস্তবতা প্রতিটি সিদ্ধান্তের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলে, যা কেবল সামরিক কৌশলই নয়, রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশকেও প্রভাবিত করে। শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র একই সঙ্গে বিপদ এবং সংযমেরও কারণ। এগুলো উভয়পক্ষের নীতি নির্ধারকদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। যেকোনো প্রতিক্রিয়া সম্ভবত সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। পাকিস্তান সম্ভবত একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাবে, তারপর সমাধানের পথ খুঁজবে। তিনি বলেন, আমরা অন্যান্য সংঘাতেও - যেমন ইসরায়েল-ইরানেও এই প্যাটার্ন দেখেছি, পরিমিত হামলা, এরপর উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টা। তবে ঝুঁকি সব সময়ই থাকে যে পরিস্থিতি পরিকল্পনা অনুযায়ী নাও চলতে পারে। কুগেলম্যান বলেন, পুলওয়ামা সংকট থেকে একটি শিক্ষা হলো, উভয় দেশ সীমিত পাল্টা আক্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ভারতকে প্রতিশোধের রাজনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধার সঙ্গে গুরুতর সংকট বা সংঘাতের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি মনে করেন, এবার উত্তেজনা বাড়তে পারে। ভারত ২০১৬ সালের মতো সীমিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বিবেচনা করতে পারে। আনোয়ার গারগাশ ডিপ্লোমেটিক একাডেমি এবং হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হাক্কানি বলেন, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের হামলার সুবিধা হলো এগুলো সীমিত পরিসরের, তাই পাকিস্তানকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় না। আবার এগুলো ভারতীয় জনগণের কাছে প্রমাণ করে যে ভারত ব্যবস্থা নিয়েছে। হাক্কানি আরও বলেন, কিন্তু এই ধরনের হামলা পাকিস্তানের কাছ থেকেও প্রতিশোধ ডেকে আনতে পারে। পাকিস্তান যুক্তি দেখায় যে কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। ভারত যে পথই বেছে নিক না কেন এবং পাকিস্তান যেভাবে সাড়া দিক না কেন - প্রতিটি পদক্ষেপ ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়ছে এবং এর সঙ্গে কাশ্মীরে ভঙ্গুর শান্তি আরও হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। একই সময়ে, ভারতকেও নিরাপত্তা ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, যার কারণে প্রথমে এই হামলা সংঘটিত হতে পেরেছে। রাঘবন বলেন, পর্যটনের ভরা মৌসুমে এমন হামলা হওয়াটা গুরুতর ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। -বিবিসি

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স